ঢাকা ০৩:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আমের মুকুলের করা ঘ্রাণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • ৫০ বার

যশোরের কেশবপুরে গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল, ছড়াচ্ছে পাগল করা সুবাসিত ঘ্রাণ আর মৌ মৌ গুঞ্জন।  পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের ভাষায়, আয় ছেলেরা, ‘আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাই’ কবিতার পংক্তিগুলো বাস্তব রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস। তবে সুখের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ।

দেখা গেছে, আমের মুকুলে তাই এখন মৌমাছির গুজ্ঞন। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমের সুর ব্যজ্ঞনা। শীতে স্নিগ্ধতার মধ্যেই ছড়াচ্ছে সোনালি মুকুল। বছর ঘুরে আবারও তাই ব্যকুল হয়ে উঠেছে আম প্রেমিদের মন। এবার সময়ের আগে সোনালি মুকুলে ভরে গেছে কেশবপুর অঞ্চলের আম বাগান। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে আমের শাখা। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে সোনলি স্বপ্নে ভাসছেন আম চাষীরা। বাগানের সারি সারি গাছে ঝুলছে আমের মুকুল। সুরভিত মুকুলের গন্ধ পাল্টিয়ে দিয়েছে এ অঞ্চলের বাতাস। তাই দক্ষিনা বাতাসে দোল খাচ্ছে আম চাষীর স্বপ্ন। আসার আলো জ্বালিয়েছে আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীদের মনে।

সরেজমিনে কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে নানা ফুলের সঙ্গে আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আকাশে বাতাসে মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারার করে তুলেছে। থোকায় থোকায় হলুদ রঙ্গের মুকুল ও গুটি আম দেখে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা বাগানে দরদাম হাঁকাচ্ছে। আর বাগানের মালিকেরা আমের ভালো ফলন পেতে ছত্রাক নাশক প্রয়োগসহ বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ততার সময় পার করছেন। আম চাষীরা খুশি হলেও কৃষি কর্মকর্তা বলেন,শীত বিদায় নেয়ার আগেই আমের মুকুল আসা ভালো নয়। কেশবপুরে প্রধান প্রধান আমের আবাদ হচ্ছে, আমরুপালি, ফজলি, মল্লিকা, লেংড়া, হিমসাগর, হাড়িভাঙ্গা, গোপালভোগ,বারি ১০, বেনারসি সিতাভোগ ও রসে ভরা বোম্বাই। এর মধ্যে হিমসাগর, ফজলি, লেংড়া ও আমরুপালির চাহিদা বেশি।

কেশবপুর উপজেলার বাগদহা গ্রামের আম চাষী হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর আমার আম বাগানে প্রচুর পরিমানে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত মুকুলে কোনো রোগ আক্রমন করেনি। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে, তাহলে আশা করছি প্রতিটি আম গাছেই পর্যাপ্ত পরিমানে আম ধরবে। উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের আম বাগানের মালিক আবদুল জলিল সরদার বলেন, বাগানের অধিকাংশ গাছে এরই মধ্যে মুকুলে ছেয়ে গেছে। এবার কুয়াশা কম থাকায় মুকুল ভালোভাবে প্রস্ফিুটিত হয়েছে। গত বছর ৩ বিঘা জমিতে আমের বাগান ছিলো। যা বিক্রি করেছিলাম ৮ লাখ টাকা। এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান আছে। এলাকাতে ফসলি চাষের জমি রেখে অনেকেই আম বাগান করেছে। এবার আম গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হবে না। তবে ছত্রাকজনিত রোগে আমের মুকুল ও গুটি আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। তাহলে বাগানে দুইদফা ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। মধ্যকুল গ্রামের আম বাগানের মালিক শাহীনুর রহমান বলেন, আম চাষে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। যার কারণে অনেকেই এ পেশায় এগিয়ে আসছেন। আমের ফলন পেতে আমরা কৃষকরা বিভিন্ন সংগঠন থেকে পরামর্শ নিচ্ছি। আসা করা যায় গত বছরের থেকে এ বছর আমের উৎপাদন বেশি হবে। আমি গত বছর ১ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছিলাম। যা বিক্রি করেছিলাম ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ বছর দেড় বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, গত বছর থেকে এ বছর কৃষকরা আম চাষের দিকে বেশি ঝঁকে পড়েছেন। গাছে আমের মুকুল এসেছে। বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে আম চাষীদের মুকুল যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে আমের মুকুলের করা ঘ্রাণ

আপডেট টাইম : ১০:০৯:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

যশোরের কেশবপুরে গাছে গাছে ফুটেছে আমের মুকুল, ছড়াচ্ছে পাগল করা সুবাসিত ঘ্রাণ আর মৌ মৌ গুঞ্জন।  পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের ভাষায়, আয় ছেলেরা, ‘আয় মেয়েরা ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে মামার বাড়ি যাই’ কবিতার পংক্তিগুলো বাস্তব রূপ পেতে বাকি রয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস। তবে সুখের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এই মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ।

দেখা গেছে, আমের মুকুলে তাই এখন মৌমাছির গুজ্ঞন। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ যেন জাদুর মতো কাছে টানছে তাদের। গাছের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় তাই চলছে ভ্রমের সুর ব্যজ্ঞনা। শীতে স্নিগ্ধতার মধ্যেই ছড়াচ্ছে সোনালি মুকুল। বছর ঘুরে আবারও তাই ব্যকুল হয়ে উঠেছে আম প্রেমিদের মন। এবার সময়ের আগে সোনালি মুকুলে ভরে গেছে কেশবপুর অঞ্চলের আম বাগান। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে আমের শাখা। মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে সোনলি স্বপ্নে ভাসছেন আম চাষীরা। বাগানের সারি সারি গাছে ঝুলছে আমের মুকুল। সুরভিত মুকুলের গন্ধ পাল্টিয়ে দিয়েছে এ অঞ্চলের বাতাস। তাই দক্ষিনা বাতাসে দোল খাচ্ছে আম চাষীর স্বপ্ন। আসার আলো জ্বালিয়েছে আম বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীদের মনে।

সরেজমিনে কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে নানা ফুলের সঙ্গে আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণ আকাশে বাতাসে মৌ মৌ গন্ধে মাতোয়ারার করে তুলেছে। থোকায় থোকায় হলুদ রঙ্গের মুকুল ও গুটি আম দেখে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা বাগানে দরদাম হাঁকাচ্ছে। আর বাগানের মালিকেরা আমের ভালো ফলন পেতে ছত্রাক নাশক প্রয়োগসহ বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ততার সময় পার করছেন। আম চাষীরা খুশি হলেও কৃষি কর্মকর্তা বলেন,শীত বিদায় নেয়ার আগেই আমের মুকুল আসা ভালো নয়। কেশবপুরে প্রধান প্রধান আমের আবাদ হচ্ছে, আমরুপালি, ফজলি, মল্লিকা, লেংড়া, হিমসাগর, হাড়িভাঙ্গা, গোপালভোগ,বারি ১০, বেনারসি সিতাভোগ ও রসে ভরা বোম্বাই। এর মধ্যে হিমসাগর, ফজলি, লেংড়া ও আমরুপালির চাহিদা বেশি।

কেশবপুর উপজেলার বাগদহা গ্রামের আম চাষী হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর আমার আম বাগানে প্রচুর পরিমানে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত মুকুলে কোনো রোগ আক্রমন করেনি। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে, তাহলে আশা করছি প্রতিটি আম গাছেই পর্যাপ্ত পরিমানে আম ধরবে। উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের আম বাগানের মালিক আবদুল জলিল সরদার বলেন, বাগানের অধিকাংশ গাছে এরই মধ্যে মুকুলে ছেয়ে গেছে। এবার কুয়াশা কম থাকায় মুকুল ভালোভাবে প্রস্ফিুটিত হয়েছে। গত বছর ৩ বিঘা জমিতে আমের বাগান ছিলো। যা বিক্রি করেছিলাম ৮ লাখ টাকা। এ বছর ৫ বিঘা জমিতে আমের বাগান আছে। এলাকাতে ফসলি চাষের জমি রেখে অনেকেই আম বাগান করেছে। এবার আম গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হবে না। তবে ছত্রাকজনিত রোগে আমের মুকুল ও গুটি আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে। তাহলে বাগানে দুইদফা ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। মধ্যকুল গ্রামের আম বাগানের মালিক শাহীনুর রহমান বলেন, আম চাষে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। যার কারণে অনেকেই এ পেশায় এগিয়ে আসছেন। আমের ফলন পেতে আমরা কৃষকরা বিভিন্ন সংগঠন থেকে পরামর্শ নিচ্ছি। আসা করা যায় গত বছরের থেকে এ বছর আমের উৎপাদন বেশি হবে। আমি গত বছর ১ বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছিলাম। যা বিক্রি করেছিলাম ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ বছর দেড় বিঘা জমিতে আমের চাষ করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, গত বছর থেকে এ বছর কৃষকরা আম চাষের দিকে বেশি ঝঁকে পড়েছেন। গাছে আমের মুকুল এসেছে। বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে আম চাষীদের মুকুল যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে।